হার্ট অ্যাটাকের পর ক্ষতিগ্রস্ত হৃদপিণ্ড নিজে নিজেই মেরামত করতে পারবে—বিজ্ঞানীদের এমন এক যুগান্তকারী আবিষ্কারে নতুন আশার আলো জ্বলেছে। যুক্তরাষ্ট্রের নর্থওয়েস্টার্ন ইউনিভার্সিটি ও ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়া সান ডিয়েগোর একদল গবেষক তৈরি করেছেন এক বিশেষ ইনজেকশন, যা হৃদযন্ত্রকে ভেতর থেকে সারিয়ে তুলতে সক্ষম।
গবেষকরা জানিয়েছেন, এই চিকিৎসা শুধু হৃদপিণ্ডের ক্ষতই সারাবে না, বরং কোষের ভেতরে কাজ করে মেরামতের প্রক্রিয়া শুরু করে। ইনজেকশনটিতে ব্যবহৃত হয়েছে প্রোটিন-সদৃশ পলিমার বা PLP (Protein-Like Polymers), যা মানুষের শরীরে থাকা প্রাকৃতিক প্রোটিনের মতো কাজ করে।
হার্ট অ্যাটাকের পর সাধারণত হৃদপেশিতে প্রদাহ ও অক্সিডেটিভ স্ট্রেসের কারণে কোষগুলো ধ্বংস হয়ে যায়। এ সময় শরীরের এক নিয়ন্ত্রণকারী প্রোটিন Keap1, সুরক্ষামূলক প্রোটিন Nrf2-কে দমন করে, ফলে কোষ পুনর্গঠনের ক্ষমতা হারায়। কিন্তু নতুন এই PLP ইনজেকশন Keap1-কে আটকে দেয়, ফলে Nrf2 সক্রিয় হয়ে কোষের ভেতরে মেরামত ও পুনর্গঠনের প্রক্রিয়া শুরু করে।
ফলাফল হিসেবে দেখা গেছে—কোষের মৃত্যু কমে গেছে, দাগযুক্ত টিস্যু হ্রাস পেয়েছে, নতুন রক্তনালী গঠনের হার বেড়েছে এবং হৃদযন্ত্রের কর্মক্ষমতা উল্লেখযোগ্যভাবে উন্নত হয়েছে।
ইঁদুরের ওপর পরীক্ষায় দেখা গেছে, হার্ট অ্যাটাকের কয়েক ঘণ্টা কিংবা কয়েক দিন পরও একটি মাত্র ইনজেকশন হৃদযন্ত্রে স্থায়ী উন্নতি ঘটায়, যার প্রভাব টিকে থাকে পাঁচ সপ্তাহ পর্যন্ত।
গবেষকেরা অবশ্য জানিয়েছেন, এটি এখনো “প্রুফ অব কনসেপ্ট” পর্যায়ে রয়েছে। মানুষের ওপর প্রয়োগের আগে নিরাপত্তা, সঠিক ডোজ, দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব এবং বড় প্রাণীর শরীরে এর কার্যকারিতা পরীক্ষা করা হবে।
তবে বিজ্ঞানীরা আশাবাদী—এই ইনজেকশন যদি মানুষের শরীরেও সফলভাবে কাজ করে, তবে এটি হার্ট অ্যাটাক-পরবর্তী চিকিৎসায় বিপ্লব ঘটাতে পারে এবং লাখো রোগীর জীবন বাঁচাতে সক্ষম হবে।